দুই মন্ত্রীকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ
বিচারাধীন বিষয় এবং বিচারবিভাগ নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে ১৫ই মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বক্তব্যের বিষয়ে ১৪ মার্চের মধ্যে ব্যাখা দিতে বলেছেন আপিল বিভাগ।
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচারাধীন বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। অন্যদিকে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আদালতের প্রতি তিনি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল।
গত ৫ই মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর মামলার রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মামলা থেকে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বাদ দিয়ে বেঞ্চ পুন:গঠন এবং আপিল পুন:শুনানীতে দাবি তোলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী। দুই মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
মঙ্গলবার সকালে আলবদর নেতা মীর কাসেম আলীর রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে ৯ সদস্যের বেঞ্চ, দুইমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের ব্যাখা দিতে ১৫ই মার্চ হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় আদালত বলেন,এধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননা কর এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে অশুভ ও অবমাননাকর বক্তব্যে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা স্তম্ভিত, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।”
ওই বক্তব্যের কারণে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম কেন শুরু করা হবে না- তা ১৪ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে নোটিসে। আর দুই মন্ত্রীকে ১৫ মার্চ সকাল ৯টায় হাজির হতে হবে আদালতে।
এ বিষয়ে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিচারাধীন বিষয়ে এমন মন্তব্য সমিচীন নয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, “সকলের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে যে, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটা প্রতিষ্ঠান, ইট ইজ এন ইনস্টিটিউশন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ সেই ইনস্টিটিউশনের অংশ। যখন আদালতে কোনো ব্যাপার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে আমরা সেটাকেই বলি সাব-জুডিস। এই সব সাব-জুডিস ম্যাটারে কারও কোনো বক্তব্য দেওয়াটা ঠিক না।
তিনি আরও বলেন, “এতে একটা প্রতিষ্ঠানের এবং এই প্রতিষ্ঠানের (সুপ্রিম কোর্ট) যদি কোনো সম্মান ক্ষুণ্ন হয় আমি মনে করি দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়।”
এদিকে তাৎক্ষনিক ব্রিফিং এ খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় আদালতের এ রুলের জবাব দিবেন তিনি।
কামরুল বলছেন, মন্ত্রী হিসেবে নয়, যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে ওই বক্তব্য ছিল তার ব্যক্তিগত মতামত।
তিনি বলেন, “কিন্তু যতো কথাই বলি না কেন, আমি যে মন্ত্রিসভার একজন সদস্য এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। কিন্তু বক্তব্য ছিল আমার নিজস্ব বক্তব্য, একজন বিচারপ্রার্থী মানুষ হিসেবে।”
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী কামরুল বলেন, “আমি আদালতেরে প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আদালতের দিক–নির্দেশনা অনুয়ায়ী যাব। আদালত রুল নিশি জারি করেছেন, আমি টেলিভিশনে দেখেছি।
“হয়তো আদেশের কাগজ পেয়ে যাব। আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই সেই রুল নিশির জবাব দেব এবং আদালত যেভাবে নির্দেশ দেবেন সেভাবেই আমি অগ্রসর হব।”
এই রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কামরুল বলেন, সব প্রশ্নের উত্তর তিনি আদালতকেই দেবেন। তবে সেজন্য তিনি সময় চাইবেন।
“আমি আজই দেশের বাইরে যাচ্ছি। একটি সরকারি সফরে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যাব। ১৬ বা ১৭ তারিখ দেশে ফিরব।
“আমি আদালতের কাছে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় প্রার্থনা করব। এই সফরের জিও গত ২ মার্চ হয়েছে, আজ মালয়শিয়াতে একটি কনফারেন্সে যাচ্ছি।”
সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলে এক পর্যায়ে কামরুল ইসলাম বলে ওঠেন- “আমি আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না… কোনো জবাব দেব না।”
- মতামত