কাকরাইলে বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের ঘোষণা
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ভারতের নিজামুদ্দিনের আমির মাওলানা সা’দকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এরপর বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের নেতারা মাওলানা সা’দকে ঠেকাতে মাদ্রাসা ছাত্রদের কাকরাইলের দিকে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি যাতে বিশ্ব ইজতেমায় না প্রবেশ করতে পারেন, সেজন্য মাঠের বিম্বরের পাশে ৫ হাজার শিক্ষাথীকে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকেই বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সা’দকে ঢুকতে দেওয়া হলে লাগাতার অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদুরে বায়তুস সালাম জামে মসজিদ সংলগ্ন চত্বরে বিক্ষোভ করে আলেম-উলামারা।
তারা বলছেন, মাওলানা সা’দ বাংলাদেশের মাটিতে পা দিলে পুরো দেশ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে।
তবে বিকাল চারটার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেইট দিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মাওলানা সা’দকে বের করে আনার পর সেখানে থাকা বিক্ষোভকারীরা আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকে।
বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় গাজীপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাখালীর দিক থেকে গাজীপুর যাওয়ার রাস্তায় দেখা দেয় তীব্র যানজট।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক মাদ্রাসা ছাত্র বলেন, তাদের দাবি মানা না হলে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হবে। যেটা শাপলা চত্বরের সমাবেশকেও ছাড়িয়ে যাবে। আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি। তারপরও যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ চলবে।
বাংলাদেশের সিনিয়র আলেমরাও চান, বিশ্ব ইজতেমায় সংঘর্ষ এড়াতে সা’দ ও তার অনুসারী বা বিরোধীরাও যেন ইজতেমায় অংশ না নেন। তারা বলছেন মাওলানা সাদ কোরআন বিরোধী অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরও তিনি নিজ অবস্থান থেকে ফিরে আসেননি। তাই আমরা তাকে বিশ্ব ইজতেমায় যেতে দেবো না।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিমানবন্দর গোলচত্বরের সামনের সড়কে দেখা যায় পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
তাবলিগ জামাতের অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বি, দিল্লি নিজামুদ্দিনের জিম্মাদার মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্য ও একক নেতৃত্বের প্রশ্নে বেশ কয়েক বছর যাবৎ আলেম-উলামা ও তাবলিগের মুরুব্বিদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর প্রেক্ষিতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, আর নিজামুদ্দিন ছেড়ে চলে যান মাওলানা ইবরাহিম দেওলাসহ বেশ কয়েকজন মুরুব্বি। বিশ্বব্যাপী তাবলিগের বিভিন্ন মারকাজগুলোও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এই দ্বিধা-বিভক্তির মধ্যে সম্প্রতি কানাডা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তাবলিগের শুরা থেকে বাংলাদেশ শুরা ও সরকারকে চিঠি দিয়ে মাওলানা সাদকেই ইজতেমার নেতৃত্বে রাখার দাবি জানায়। কিন্তু বিরোধীরা কোনোভাবেই মাওলানা সাদকে মেনে না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়।
মাওলানা মোহাম্মদ সাদের আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে বিক্ষোভ চলতে থাকায় উত্তরা-জসীমউদ্দিন মোড় পর্যন্ত এবং খিলক্ষেত, শেওড়া ছাড়িয়ে বনানী পর্যন্ত এ যানজট দেখা দিয়েছে।
- মতামত