শিশু-কিশোরদের যোগ্য নাগরিক হতে বললেন; প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু-কিশোর ও তরুণদের আগামীর বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘তোমরাই তো একদিন দেশ পরিচালনা করবে। আমাদের মতো মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হবে। সেজন্য নিজেদেরকে এখন থেকেই তৈরি করতে হবে।’
তিনি আগামীর যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য শিশু-কিশোরদের গুরুজনকে শ্রদ্ধা ও মান্য করা এবং লেখাপড়ায় মনযোগী হবার পাশাপাশি খেলাধূলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে আগামীর দেশ পরিচালনার যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোল। যাতে বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে যে স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন তাঁকে আমরা বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারি। কেউ যেন আমাদের আর অবহেলা করতে না পারে, বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলনে, আমাদের শিশুদের একট কথা সবসময় মনে রাখতে হবে-আমরা বিজয়ী জাতি। আমার মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। সুতরাং আমরা উন্নয়নের কোন ক্ষত্রেই আর পিছিয়ে থাকতে পারি না।
তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাব। আমরা বিশ্বে নিজেদেরকে এমন অবস্থানে নিয়ে যাব, যাতে করে আর কেউ কোনদিন আমাদের অবহেলা করতে না পারে।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারী এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠ’র প্রতিকৃতি, ছবি এবং দেশের নানা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দিয়ে সাজানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সময় আমরা সবসময় বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি।
তিনি বলেন,এদেশের মানুষের শিক্ষার সুযোগ ছিল না, তারা চিকিৎসা পেত না, তাদের খাবার ছিল না, আশ্রয় ছিল না। আমাদের অর্থ-সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এমনকি আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলারও অধিকার পর্যন্ত তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। এজন্য জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে ২৩ বছরের সংগ্রাম-নির্যাতন,জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন তিনিই প্রথম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ছয় দফা, সত্তরের নির্বাচন ও অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি দেশকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ’৭০ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। সে সময় ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ রেসকোর্সেও ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়র্দি উদ্যান) তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। লাখো জনতার সমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনাতর সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। তাঁর ডাকে পূর্ব বাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন,বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র-নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরসহ শিশু-কিশোর-নারী-বৃদ্ধ, কাউকেই রেহাই দেয়নি তারা। ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যায় মেতে ওঠে পাক সামরিক বাহিনী।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার আহ্বানে মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করি।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৪৫তম বছরে পা দিয়েছি আমরা। কোনোদিক থেকে পিছিয়ে থাকবে না আমাদের দেশ। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আমরা এগিয়ে যাবো।
তিনি তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনব্যক্ত করে বলেন,ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা নিজেদের দক্ষিণ এশিয়ার একটি সুখী ও সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী,সকাল ৮টা ৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ সমাবেশের উদ্বোধন করেন। তিনি স্টেডিয়ামে এসে শুরুতেই টাইগার ক্যারাভ্যানে প্রবেশ করেন ও সেটা ঘুরে দেখেন। এরপর জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিশু সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন ডিসপ্লে প্রদর্শন করে এবং বাদ্যের তালে তালে সমাবেশ প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানায়।
- মতামত