নেপাল-চীন সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার পেছনে যে নারী
ভারতের জন্যে একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে নেপাল থেকে। ধারণা করা হচ্ছে নেপালকে বশে রাখতে ভারতের সব ধরনের কূটনৈতিক চেষ্টা বিফল হয়েছে। এর মূলে রয়েছেন নেপালে চীনের রাষ্ট্রদূত “হু ইয়াংকি”। কুটনীতিবিদ হিসেবে হু ইয়াংকি’র ২৪ বছরের পেশাগত জীবন। নেপালে আছেন দেড় বছরের মতো।
এর মধ্যেই দেশটিতে তিনি জনপ্রিয় বিদেশি নাগরিকে পরিণত হয়েছেন। নেপালে আসার আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে উচ্চতর পদে ছিলেন। পাকিস্তানেও কাজ করেন কিছুদিন। তিনি আসার পরেই গত কয়েক মাসে নেপালের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অভাবনীয় উচ্চতায় পৌঁছেছে।
প্রেসিডেন্ট থেকে সেনাপ্রধান পর্যন্ত নেপালের সবখানে হু ইয়াংকি’র উপস্থিতি সরব। এ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে নানা ধরনের বিশ্লেষণ ও অনুমানের অন্ত নেই। চীন-ভারত বা নেপাল-ভারত উত্তেজনা নিয়ে লেখা সেখানকার অধিকাংশ প্রতিবেদনে হু ইয়াংকি থাকছেন অনিবার্যভাবে।
সম্প্রতি নেপালের সেনাপতি জেনারেল পূর্ণ থাপার সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে দেখা গেল হু ইয়াংকিকে। অনুষ্ঠানটি ছিল নেপালের সেনাবাহিনীর জন্য চীন থেকে আসা করোনার সুরক্ষা সামগ্রী হস্তান্তরের। হু’র যেখানে থাকা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম তাকে ছেড়ে কথা বলেনি।
It's a great pleasure to attend the Handover Ceremony for Chinese PLA's medical supplies to Nepali Army with Gen. Purna Chandra Thapa, Chief of the Army Staff. A friend in need is a friend indeed. China is always in solidarity with Nepal! 🇨🇳❤️🇳🇵 pic.twitter.com/HJ0BSGbm3h
— Ambassador Hou Yanqi (@PRCAmbNepal) May 13, 2020
নেপালে করোনা ভাইরাস হানার পরই হু ইয়াংকি নিজ প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারির সরাসরি টেলিফোন সংলাপের ব্যবস্থা করেন। তাতে প্রেসিডেন্ট শি নেপালকে প্রচুর সুরক্ষা সামগ্রী দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। ক্রমাগত সেসব আসছে এখন।
এদিকে নেপালের তরুণ-তরুণীদের কাছেও তিনি খুবই জনপ্রিয়। নেপালের জন্য তার কাজকর্ম স্থানীয়দের মন কেড়েছে। লাখ লাখ নেপালি এখন হুকে ‘ফলো’ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে হু নেপালি নারীদের পোশাক পরে এক নাচের আসর মাতান।
২০২০ সালে নেপাল বিদেশ থেকে বাড়তি পর্যটক আনার লক্ষ্য নিয়েছে। এ কাজে হু ইয়াংকি নেপালকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। চীন থেকে বাড়তি পর্যটক আনতে হু নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে নিজের ছবি তোলেন। অনেক নিউজ পোর্টালে সেসব ছাপাও হয়। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টেও হু কিছু ছবি দিয়েছেন। নিচে লেখেন, ‘ট্রু– বিউটি অলওয়েজ টাচ ডিপ হার্ট’। সঙ্গে সঙ্গে ছবিগুলো ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে। অনেক মন্তব্য শিষ্টাচারের সীমাও ছাড়িয়েছে। হয়তো হু নারী বলেই এমন হয়েছে।
এদিকে হুকে নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই গত মাসে শুরু হয়েছে নেপাল-ভারত সীমান্ত বিরোধ এবং ভারত-চীন সংঘর্ষ। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধে নেপাল সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠোর। অনেক ভারতীয় কলামিস্ট তখন এও লিখেছেন, ভারত-নেপাল সীমান্ত বিরোধের জন্য হু ইয়াংকি’র আগ্রাসী কুটনীতি দায়ী। তাদের ভাষায় তিনিই এই সংকটের ‘স্থপতি’।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হু উর্দু ভাষায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছিলেন। সেটাও এখন তার বিরুদ্ধে প্রচারণায় কাজে লাগানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন হুকে একাকি ডিনারে দাওয়াত দেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি।
অলি সরকারকে রক্ষায় চীনের যে সরাসরি স্বার্থ রয়েছে, তা এখন স্পষ্ট। আর হুর প্রভাবে যদি নেপাল-ভারত সম্পর্কে চিড় ধরে কিংবা সেখানে ভারতের প্রভাবে টান পড়ে, তার জন্য কাঠমান্ডুতে নয়াদিল্লির প্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ধর্ম ও সংস্কৃতিতে নেপাল ও ভারতের রয়েছে গভীর ঐতিহাসিক ঐক্য। তারপরও একজন হু যদি সেখানে হঠাৎ চীনের প্রভাব বাড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হন, সেটা তারই কৃতিত্ব বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
- মতামত